ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

উবার-পাঠাও চালকদের ডাকা-ডাকিতে বিরক্ত যাত্রীরা 

সিনজাত রহমান সানি

প্রকাশিত : ২২:২৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো শুরুর দিকে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও দিনেদিনে সেবার মানসহ নানান দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠায় অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে, অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী না নিয়ে ডাকা-ডাকি করে দর কষাকষি করা, রাইডারদের সুবিধামত জায়গায় না হলে রাইড বাতিল করা, যাত্রা করার আগে ভাড়া কম দেখালেও পরে তা দিগুণ আদায় করা। কম দূরত্বে না যাওয়া, ডিসকাউন্ট থাকলে তা মানতে নারাজ, অফিস আওয়ারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ চালকদের খারাপ ব্যবহারের কারণে রাইড শেয়ারিং সেবার প্রতি যাত্রী সাধারণের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে।  

সরজমিনে রাজধানীর গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, রাত তখন ১২টা গুলিস্তান মোড়ে প্রায় ১৫-২০টি মোটর সাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, সেবা দানকারী মোটর সাইকেলগুলোর কাছে যেতেই ‘কই  যাবেন’ বলে ডাকা-ডাকি শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ‘যাব না’ বলতে বলতে বিরক্তি ধরে যায়।
 
সেবা গ্রহণকারী এক যাত্রী মনির হোসেন বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিদিন অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেই মৌমাছির মতো ঘিরে ধরে বাইক চালকরা। সবাই- কই যাবেন? কই যাবেন? বলে চিৎকার করে। এটা কেমন ব্যবহার! আমার কাছে অবাক লাগে। মোটরসাইকেল তো ডাকাডাকি করার কথা না। অ্যাপের মাধ্যমে কল দিলে তবেই আমি কোথাও যেতে পারবো।

বছর তিনেক আগে রাজধানীতে রাইড শেয়ারিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। উবার ছাড়াও রাজধানীতে পাঠাও, আমার রাইড, মুভ, বাহন, চলো, ইজিয়ার, বিডিক্যাবস, ঢাকা মটো, ঢাকা রাইডার্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা দিচ্ছে। তবে এর মধ্যে উবারের গাড়ির সংখ্যা বেশি।

ঢাকায় যানজটে নাকাল বাসিন্দারা প্রথম দিকে এই সুবিধা বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রশংসার স্থলে নিন্দা করতেও দ্বিধা করেননি সাধারণ মানুষ। 

মোটরসাইকেল চালকরা অ্যাপসে যাত্রী না নিয়ে চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। শহরের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে রিকশার মতো সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ডাকাডাকি চলছেই তাদের। এসব নিয়ে অভিযোগের যেমন শেষ নেই তেমনি ঘটছেও নানা দুর্ঘটনা। রাজধানীর কোনো না কোনো স্পটে গেলে কারো হাতে মোবাইল দেখামাত্র কিংবা যাত্রীর মতো দেখলেই শুরু করেন ডাকাডাকি।

অ্যাপসের মাধ্যমে নিত্য চলাচল করা যাত্রীদের অভিযোগ, এই ডাকাডাকির ব্যাপারটি খুবই বিরক্তির। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করার প্রক্রিয়া শুধুমাত্র অ্যাপের মাধ্যমে। আর সেটা যদি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশার যাত্রী বহনের পর্যায়ে চলে যায় তবে সেটা দুঃখজনক। অনেকে বিষয়টিকে অশনিসংকেত বলেও মনে করছেন। 

এদিকে অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেলে চলাচল করেন এমন এক যাত্রী নিজাম বলেন, রাইডার পেতে সময় লাগে। তারওপর ভাড়া বেশি দেখায়। আবার অনেক সময় ‘সার্চ করতে করতে আর পাওয়াই যায় না। এজন্য অ্যাপস বাদ দিয়ে চুক্তিতে চলে যাই। চুক্তিতে যাওয়া ঝুকিপূর্ণ জেনেও এই যাত্রী আরো বলেন, দুর্ঘটনা তো ঘটেই। সেটা জানি। কিন্তু জরুরি সময়গুলোতে অ্যাপসে নেটওয়ার্ক বিজি দেখানোর কারণে ঝুঁকি নিয়েই চলে যাই।

অবশ্য রাইডাররা বলছেন, ভিন্ন কথা। বেশকিছু রাইডারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাকাডাকির কারণ অন্য। অনেক সময় যাত্রীদের মোবাইলে চার্জ থাকে না, কারও অ্যাপস থাকে না আবার কারো চলতি পথেই ডাটা শেষ হয়ে যায়। এসব কারণেই ডেকে জিজ্ঞাস করেন, কোথাও যাবেন কিনা!

সাদাত হোসেন নামের এক রাইডার বলেন, অ্যাপস যাত্রী নিলেও সেটা কম। চুক্তিতে নেয়ার কয়েকটি কারণ। তারমধ্যে প্রধান হলো, অনেক যাত্রীর ডিসকাউন্ট থাকে। তখন আমার এক লিটার তেলও কেনার টাকা হয় না। তাই যাত্রী ডাকাডাকি করি। 

মীর রাইয়ান নামে একজন 'রাইড শেয়ারিং উবার অফ বাংলাদেশে' অভিযোগ করে বলেন, বিকাশ এর মাধ্যমে ডিসকাউন্ট আসার পর পাঠাও এখন গাড়ি ডাকার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, বাইকাররা বিকাশে যেতে চাননা অনেকেই প্রথমত, বাইক আসার পর অনেকে বলেন ডিসকাউন্ট না থাকলে অ্যাপ ক্লোজ করি, ভাড়া যা আসছে দিয়ে দিয়েন। কার্যত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, তখন দরকষাকষির সময় থাকেনা। কারণ সকালে একটা রাইড বাসার কাছে আসার পর তাকে না করার মতো সময় আর ইচ্ছাশক্তি থাকে না।

একই গ্রুপে রিয়াজ মাহমুদ হিমেল নামে একজন বলেন, রাইড নেয়ার আগে ভাড়া ১৪০ টাকা দেখায়, কিন্তু ভাড়া আসে ৮০ টাকা। মামাতো ভাইকে রাইড দিছিলাম, বললাম ১৪০ টাকার আশেপাশে আসবে। সে প্রথমবার রাইড নেয়ার কারণে এতকিছু না বুঝেই রাইডারকে ১৫০ টাকা দিয়ে চলে যায়, পরে আমি যখন দেখলাম ৮০ টাকা ওকে কল জিজ্ঞেস করলাম কত দিয়েছো, বললো ১৫০, রাইডারকে কল দিলাম সে আর ফেরত দিলোনা।

তানিয়া আফরোজ বলেন, ইদানীং উবার ড্রাইভারদের বেয়াদবি এত বেড়েছে, বলার মত না। তবে এর মধ্যে কেউ ব্যাতিক্রম আছে (ভালো)। ফোন দিলে তারা আগেই জিজ্ঞেসা করে কই যাবেন তারপর পছন্দ না হলে বাজে ব্যবহার করে কেটে দেয়। নিজেরাই ঘুরে তারপর ভাড়া ডাবল করে, তো ভাই আমাদের এত কিছু সহ্য করতে হবে কেন? কি শুরু হইছে এগুলা? সমাধান দরকার।

নাফিউর রহমান নাশাদ বলেন, উবারের ডাকাতির একটা লিমিট থাকা দরকার। আজ নাবিস্কো থেকে মহাখালী টিবি গেটের এদিকে গাড়িতে ভাড়া দেখাচ্ছিল ২৪২ টাকা। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ৪২৪ টাকা আসছে, কমপ্লেইন করার পর রিফান্ড ও দেই নাই, পিক আপ থেকে ডেস্টিনেশন দূরত্ব ছিল সর্বোচ্চ ৩.৩ কি.মি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি